বিমল কুন্ডুঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আরকে টেক্সটাইল মিলের নৈশ প্রহরী ফেরদৌস (১৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামী মামুন হোসেন (৩০) কে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। মামুন উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের ঘোড়শাল গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। টেক্সটাইল মিলের রড চুরির দায়ে চাকরি হারানোর প্রতিশোধ নিতেই ফেরদৌসকে খুন করেছে বলে গ্রেপ্তারকৃত মামুন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজাদপুর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৮ জানুয়ারি ফেরদৌসের বাবা আক্কাস আলী থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। জিডির পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মামুনকে চিহ্নিত করে। একপর্যায়ে ১০ জানুয়ারি বুধবার ঢাকার আদাবর থানার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামুন হোসেন (৩০) নামে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার জিম্মা থেকে নিহত ফেরদৌসের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। একইদিন তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি বাসস্ট্যান্ডের অদুরে স্থাপিত আর কে টেক্সটাইল মিলের মেঝের মাটি খুঁড়ে ফেরদৌসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কম্বল, লোহার সোলাই রেঞ্জ ও গর্ত করার কাজে ব্যবহৃত কোদাল জব্দ করে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন হত্যার দায় স্বীকার করে বলেন, ২০২০ সালে ওই মিলে কাপড়ের প্রিন্ট ডিজাইনার হিসেবে তিনি যোগদান করেন। ৪/৫ মাস আগে মিলের লোহার রড চুরির সময় তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন ফেরদৌস। এতে মামুনের চাকরি চলে যায়। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ফেরদৌসকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
একপর্যায়ে গত ৪ জানুয়ারি মামুন ঢাকা থেকে এসে ফেরদৌসের সঙ্গে দেখা করে আগের ঘটনার জন্য মাফ চেয়ে তার সঙ্গে রাতে মিলের মধ্যে থাকতে চান। তারা ওইদিন মিলের মধ্যে একসঙ্গে ঘুমান। ৫ জানুয়ারিতেও তারা রাতে একসঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। ওইদিন গভীর রাত সাড়ে ৩টার দিকে মামুন চুরির উদ্দেশ্যে মিলের লোহার রড খুলতে থাকেন। রড খোলার শব্দে ফেরদৌসের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি মামুনকে নিষেধ করেন এবং ড্রয়ারে থাকা সেলাই রেঞ্জ নিয়ে তাকে মারতে যান। এসময় মামুন রেঞ্জটি কেড়ে নিয়ে ফেরদৌসের মাথায় সজোরে আঘাত করেন। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে ঘটনাস্থলেই ফেরদৌস মারা যায়। পরে কোদাল দিয়ে মিলের মেঝেতে গর্ত করে তার মরদেহ পুঁতে রেখে পালিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে থানার অফিসার ইনচার্জ খায়রুল বাশার সহ অন্যান্য অফিসারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।