শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
Homeসারাবাংলারায়পুরে অবৈধ ১৫টি স্ট্যান্ডে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজী বন্ধ হচ্ছেনা

রায়পুরে অবৈধ ১৫টি স্ট্যান্ডে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজী বন্ধ হচ্ছেনা

তাবারক হোসেন আজাদ: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বাস, ট্রাক, সিএনজি ও অটোরিকশার অবৈধ ১৫টি স্ট্যান্ডগুলোতে বীরদর্পে চলছে চাঁদাবাজি। শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতি মাসে পরিবহন খাতে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। রাজনৈতিক দলের উঠতি নেতা থেকে পাতি নেতাও রয়েছে চাঁদাবাজির এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটে। যানবাহনের চালক ও হেলপাররা জানান, কোনো রুটের যানবাহনই চাঁদামুক্ত নয়। বরং চলাচলকারী সব গাড়িকে প্রতি ট্রিপেই নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদা পরিশোধের পর টার্মিনাল ছাড়তে দেওয়া হয়। এক কথায় সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে রায়পুরসহ জেলার পরিবহন খাত। গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে এক আ’লীগ নেতাসহ ৮ সিএনজি চালকে আটক করে জরিমানা আদায় করছেন ভ্রাম্যমান আদালত। পরিবহন মালিক ও চালকরা জানান, রায়পুরসহ জেলার প্রায় ১৫ হাজার পরিবহন চলাচল করছে। আর প্রতিটি স্ট্যান্ড ঘিরে রয়েছে শ্রমিক সমিতি কিংবা মালিক সমিতির নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠন। আর ওই সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে থাকছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা। এদের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট। আবার প্রতিটি স্ট্যান্ডেই রয়েছে ওই সিন্ডিকেটের নিয়োগপ্রাপ্ত লাইনম্যান। সিএনজি, অটোরিকশা, বাস কিংবা ট্রাক থেকে ওই লাইনম্যানের হাতেই নির্ধারিত অংকের চাঁদার টাকা আদায় হচ্ছে প্রতিদিন। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে সিএনজি ও অটোরিকশা। প্রতিটি বাসের শেষ কিংবা শুরুর গন্তব্যে চলে ওয়েবিল কিংবা শ্রমিক উন্নয়নের নামে চাঁদাবাজি। তারা আরও জানান, রুটে চলাচল করতে হলে শুরুতেই এককালীন চাঁদা দিতে হয় ২ হাজার – ৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয় ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা। চাঁদা না দিলে চলাচল করতে পারবে না গাড়ী। টোকেনের মাধ্যমেও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি হচ্ছে। নিয়মিত হারে চাঁদা দিতে গিয়ে অনেক পরিবহন লোকসানের মুখে পড়েছে। অনেক পরিবহন বন্ধও হয়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ পরিবহন মালিককে এভাবে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে- রায়পুরসহ জেলার সদর, রামগতি, রামগঞ্জ, কমলনগর ও চন্দ্রগঞ্জ বাজার স্ট্যান্ডে বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি চলছে প্রকাশ্যে। চাঁদাবাজির বড় স্ট্যান্ড হচ্ছে- রায়পুর বাস টার্মিনাল, হায়দরগঞ্জ সড়কে পাউবোর সামনের স্ট্যান্ড, রায়পুর চাঁদপুর সড়কে বড় মসজিদ সংলগ্ন, পীর ফজলুল্লাহ সড়ক সংলগ্ন, কাফিলাতুলি সড়ক, বাসাবাড়ী থেকে হায়দরগঞ্জ সড়ক, পাটোয়ারী রাস্তার মাথা থেকে খাসেঁরহাট সড়ক, হাজীমারা সুইজগেইট থেকে মোল্লারহাট ও সদর, রায়পুর-পানপাড়া-রামগঞ্জ সড়ক স্ট্যান্ডসহ ১৫টি স্ট্যান্ডে সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পরিবহন খাত। জেলা রোড ট্রান্সর্পোট অথরিটি তথা বিআরটিএর নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জেলায় মোট সিএনজি আটোরিকশার রেজিস্ট্রশন দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। বাকী কয়েক হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে থাকে স্ট্যান্ড কমিটিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে। এ সব অবৈধ সিএনজিদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট মোঃ সালাহ্ধসঢ়; উদ্দিন রিগ্যান বলেন, সারাদেশসহ রায়পুরে বাসটার্মিনাল ছাড়াও শহরে যত্রতত্র পরিবহনের চাঁদা আদায় বন্ধ করতে আমি ও কুষ্টিয়া জেলার ট্রাক মালিক সমিতি একটি রিট পিটিসন দায়ের করেন (যার নং-৯৬৩৭/২০১৮)। মামলার শুনানির পর গত ২৪ জুলাই হাইকোর্টের আদেশ ও নির্দেশের পরও রায়পুর উপজেলা ও পৌরসভায় বাস ও ট্রাক ষ্টেশনের বাহিরে বিভিন্ন সড়কে ও সড়কের উপর রাখা সিএনজি থেকে দৈনিক ৯০/১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। যাহা সম্পূর্ন উচ্চ আদালতের আদেশ ও নির্দেশের পরিপন্থি। উল্লেখ্য রায়পুর থানার সামনে সড়কের দু’পাশ বাস ও ট্রাক ষ্টেশনের আওতামুক্ত এমনকি পার্কিং এর মধ্যে পড়ে না। তাই সাত দিনের মধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার সড়কের সকল ধরনের চাঁদা আদায় বন্ধে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু দুইদিন ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালানোর পর আবার চাঁদাবাজি প্রকাশ্যে চলছে। রায়পুর থানার ওসি একেএম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, সারাদেশে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। আমার কাছে চিঠি আসায় পরিবহন খাতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের থানায় ঠেকে আদালতের নির্দেশনা দিয়ে মোবাইলকোট পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গলবার সড়কে চাঁদা তোলার সময় আলম ড্রাইভার নামে একজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিআরটিএ লক্ষ্মীপুরের সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, প্রত্যেক চালকের গাড়ি চালাতে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। আর হিউম্যান হলারগুলো কোন বাহনের আদলে চলবে, তা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে হিউম্যান হলারগুলোর ভাড়ার তালিকা তৈরির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হবে।

আজকের বাংলাদেশhttps://www.ajkerbangladesh.com.bd/
আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল নিউজ পেপার এখন দেশ-বিদেশের সর্বশেষ খবর নিয়ে প্রতিদিন অনলাইনে । ব্রেকিং নিউজ, জাতীয়, আন্তর্জাতিক রিপোর্টিং, রাজনীতি, বিনোদন, খেলাধুলা আরও অন্যান্য সংবাদ বিভাগ । আমাদের হাত বাধা নেই, আমাদের চোখ খোলা আমরা বলতে পারি ।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments