বাংলাদেশ প্রতিবেদক: ওদের টার্গেট ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসে পেনশন বা সঞ্চয়পেত্রের টাকা তুলতে আসা বয়স্ক ব্যক্তিরা। একেক সময় একেক জেলায় যেয়ে সেখানকার তথ্য সংগ্রহ করে কাজে নামে। এরপর কমান্ডো স্টাইলে শিকারকে ঘিরে সুবিধামতো সময়ে ছো মেরে নিয়ে যায় টাকাভর্তি ব্যাগ। এককজন ব্যাগ নিয়ে পালায়, আরেকজন পালানো রাস্তা করে দেয় আর আরেকজন থাকে পলায়নপর চোরকে প্রটেকশন দিতে।
এভাবে ১৭ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছিল এই অপরাধ। তবে এবার পুলিশের জালে গ্রেফতার হয়েছে এই সংঘবদ্ধ চক্রের দুই সদস্য। তাদের নিকট হতে উদ্ধার করা হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। চক্রের অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
বুধবার দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা।
গ্রেফতারকৃত ওই দুইজন হলেন, খুলনার হরিণটানা থানার গোলাডাঙ্গা গ্রামের মৃত ফটিক শেখের ছেলে ফারুক শেখ (৬০) ও মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার পূর্ব কোলা গ্রামের মো. জৈনদ্দিন ওরফে জিয়াউদ্দিনের ছেলে মো. আলী (৪৫)।
মঙ্গলবার ভোররাত থেকে বুধবার ভোররাত পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে পৃথক পৃথকস্থান হতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ফারুকের নামে গাইবান্ধা থানায় অন্য একটি মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা সুমন রঞ্জন কর বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের প্রধান পোস্ট অফিসে বাবার পেনশনের ২০ লাখ টাকা তুলতে যান নজরুল ইসলাম (৪২) নামে এক ব্যক্তি। টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় থেকেই তাকে ঘিরে ধরে এবং পোস্ট অফিসে সুবিধা করতে না পেরে টাকা নিয়ে বের হওয়ার পর নজরুলকে অনুসরণ করে ব্যাংক পর্যন্ত যায়। নজরুল ম্যানেজারের কক্ষের সোফায় টাকার ব্যাগ রেখে ক্যাশ অফিসারের সাথে কথা বলতে পাশের রুমে যায়। এ সময় ওই তিনজন সেখানে ছিল। তাদের একজন টাকার ব্যাগটি নিয়ে যায়। আরেকজন রাস্তা ক্লিয়ার করে দেয় এবং অপরজন তাকে প্রটেক্ট করার জন্য অবস্থান নিয়ে দাড়ায় যাতে কেউ ধাওয়া করলে সে বাধা দিতে পারে।
ঘটনার তিনদিন আগে এরা ফরিদপুরে এসে কোন কোনস্থানে টাকা পয়সা লেনদেন হয় সে তথ্য সংগ্রহ করে উল্লেখ করে সুমন রঞ্জন কর জানান, ওদের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা হচ্ছে ওরা ব্লেড দিয়ে কেটে যতো টাকা নিয়ে যেতে পারে। ওরা জানতো সরকার কড়াকড়ি করায় এখন আর মানুষ টাকা জমা দিতে নয় বরং টাকা তুলতে পোস্ট অফিসে যায়। সে ছকেই ওরা পোস্ট অফিসকে বেছে নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে সোনালী ব্যাংকের নিম্নমানের সিসি ক্যামেরার তথ্য উল্লেখ করে জানানো হয়, ওই ফুটেজ থেকে জড়িতদের চিহ্নিত করতে অত্যন্ত বেগ পেতে হয়েছে। খড়ের গাদা থেকে সুই খুঁজে বের করার মতো আমরা এ তদন্ত কাজ চালিয়েছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই শামীম হাসান।
পুলিশ বলছে, ঘটনার সময় ব্যাংকে গার্ড ছিল না। এ ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজার জড়িত থাকার সম্ভাবনা না থাকলেও তার নেগলেসি আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনার সাথে জড়িত আরো দু’জনকে গ্রেফতার করা গেলে বাকি টাকা উদ্ধার হবে।