তাবারক হোসেন আজাদ: রোকেয়া বেগম (৪৪)। তিনি অবিবাহিত ও অসুস্থ। নারী ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তার সততা ও উন্নয়নমূলক কাজ এখনো গ্রামবাসীর মনে তার প্রতি ভালোবাসা টিকিয়ে রেখেছে। তিনি সবার কাছে রোকেয়া মেম্বার (আপা) হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আজো তার ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। তিনি এখনো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিএফ’র চাল নিতে হচ্ছে। পাঁচ বছর ইউপি সদস্যের দায়িত্বে থেকেও জরাজীর্ণ বসতঘরটিই এখন তার শেষ আশ্রয়স্থল। “আসমানিদের দেখতে যদি তোমরা সবাই চাও, রহিমুদ্দিনের ছোট্ট বাড়ী রসূলপুরে যাও” ঠিক কবি জসীম উদ্দিনের কবিতার মতোই ফুঁটে উঠেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের সাবেক নারী ইউপি সদস্য রোকেয়া বেগমের একাকিত্ব জীবনযাপন। রোকেয়া বেগম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের আবিরনগর গ্রামের আমজাদ মিঝি বাড়ির মৃত আব্দুল হামিদের মেয়ে ও সাবেক লাহারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য। এক সময় যিনি অন্যকে সহযোগিতা দিতে এগিয়ে যেতেন, সেই রোকেয়া এখন বসবাস করছেন পরিত্যক্ত টিন আর ভাঙ্গা বেড়ার জরাজীর্ণ বসতঘরে। রোকেয়া জানান, অভাব-অনটনের সংসারে রোকেয়া বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেনি। কিশোরী বয়সে তিনি দর্জির কাজ শেখেন। হঠাৎ তার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়ায় আর বিয়ে করেননি তিনি। তবে কিছুদিন সঙ্গী হিসেবে ভাইয়ের মেয়ে তাহমিনা (১৮) থাকলেও এখন একটি ঘরের জন্য স্বামীসহ তাকে ঘরে আনতে পারছেন না তিনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া ভিজিডি কার্ডের রেশন ও ছয়টি ছাগল পালন করে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি ১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত আবিরনগরে নারী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে সে সময় ব্যস্ত থাকলেও তিনি তার ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেননি। ঝড়-তুফানের মধ্যেও রোকেয়া ঘরটি ছেড়ে কোথাও যান না। এ ঘরটি তার শেষ ঠিকানা। রোকেয়ার কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, সরকারের ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে রোকেয়া বেগমকে এক ঘর দিলে ভালো হতো। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তারা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য রোকেয়া বেগমের অসুস্থতাসহ মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়টি আমাকে কেউ অবহিত করেনি। খোঁজখবর নিয়ে তাকে সহযোগিতাসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।