বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Homeসারাবাংলাকেশবপুরে পাখির নকল ডাক ও কারেন্ট জালের ফাঁদ দিয়ে অতিথি পাখি শিকার

কেশবপুরে পাখির নকল ডাক ও কারেন্ট জালের ফাঁদ দিয়ে অতিথি পাখি শিকার

জি.এম.মিন্টু: যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুরসহ আশ পাশের উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় ও মাছের ঘেরে সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটছে। শীত মৌসুমে অতিথি পাখি শিকারীরা পাখির নকল ডাক ও কারেন্ট জালের ফাঁদ দিয়ে এ অতিথি পাখি শিকার উৎসবে মেতে উঠেছে।

নির্বিচারে পাখি নিধনের ফলে জীব বৈচিত্র মারাত্বক হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখিরা তুলনামূলক যে দেশে শীত কম সে দেশে চলে যায়। তাছাড়া তীব্র শীতে খাবারেরও অভাব দেখা যায়। অধিকাংশ সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। সেই সাথে তুষারপাত। সব মিলিয়ে পাখিদের থাকা ও খাবার সংগ্রহ করা তুলনামূলক অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এসব পাখি আসে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের কিছু এলাকা থেকে। খোজ খবর নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার বিল বলধালী, বিল গরালিয়া, বিল জেলদার, বিল খুকশিয়া, টেপুর বিল, মনিরামপুরের মশি^নার (বাওয়োড়)বিল,হরিনার বিল, দূর্বাডাঙ্গাসহ শত শত বিল রয়েছে। অনেক বিলে সারা বছর পানি থাকে। এসব খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের রয়েছে। এ সব খাল বিলে শীত মৌসুমের শুরুতে হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। সকাল হলেই পাখিরা এসব স্থানে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। এ সময় ঘেরে এলাকার লোকজন সহ সাধারণ শিকারীরা পূর্ব থেকেই ওই সব স্থানে পাখির নকল ডাক, কারেন জালের ফাঁদ ও বিভিন্ন মাছ ও ফড়িং জাতীয় প্রাণীতে বিষ মিশিয়ে পাখি শিকার করছে।

সন্ধ্যার শুরুতেই লাইলোন সুতা ও কারেন্ট জাল দিয়ে চলছে নির্বিচারে পাখি নিধন। ১০ থেকে ১৫ ফিট উঁচু করে কারেন্ট জালের বেড়া দেওয়ার ফলে রাতে খোলা আকাশে ও খোলা জায়গায় উড়ে বেড়ানো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ওই জালে আটকা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে শিকারীরা তা ধরে বস্তা বা খাঁচায় বন্দি করে। পরে সুযোগ বুঝে তা চড়া দামে অতি গোপনে বিক্রি করছে। নাম প্রকাশ না করার সর্তে এক পাখি শিকারি বলেন, ইন্টারনেট থেকে অতিথি পাখির ডাক রেকর্ড করে সেই পাখির স্বর সন্ধ্যায় মৎস্য ঘেরে সাউন্ড বক্সের ও মোবাইলের মাধ্যমে বাঁজতে থাকে। চার পাশে কারেন্ট ও লাইলোন সুতার ফাঁস জালে আটকানো থাকে। সাউন্ড বক্সে পাখির ডাক শুনে অতিথি ও স্থানীয় পাখিরা ফাঁদে গিয়ে ধরা পড়ছে। একবার এর মধ্যে পাখি ঢুকলে গলায় ফাঁস লেগে আটকিয়ে যায়। এ ভাবে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করি। অনেকে রাত ৮টার পরে মৎস্য ঘেরে পাখির ডাকের ফাঁদ পেতে রেখে আসে এবং রাতে ৪টার দিকে এ ফাঁদ তুলে আনে। এ তে অনেক পাখি ধরা পড়ে। এ ছাড়াও অনেক শিকারীরা প্রতিদিন শত শত অতিথি পাখি ফাঁদ ও বিষ টোপ দিয়ে পাখি শিকার অব্যাহত রেখেছে।

পাখি শিকার যা দন্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দন্ডের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে। এছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি অতিথি পাখির মাংস ও দেহের অংশ সংগ্রহ করে দখলে রাখে কিংবা বেচা-কেনা করে। তবে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখিরা তুলনামূলক যে দেশে শীত কম সে দেশে চলে যায়। তাছাড়া তীব্র শীতে খাবারেরও অভাব দেখা যায়। অধিকাংশ সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। সেই সাথে তুষারপাত। সব মিলিয়ে পাখিদের থাকা ও খাবার সংগ্রহ করা তুলনামূলক অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এসব পাখি আসে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের কিছু এলাকা থেকে। বাড়িতে অতিথি আসলে যে কেউই খুশিতে থাকে। অনটন থাকলেও বাঙালি সর্বোচ্চ চেষ্টায় থাকে অতিথি আপ্যায়নে। তবে অতিথি পাখিদের সাথে ঘটে তার উল্টোটা। বন্দুকের গুলি, বিভিন্ন রকম ফাঁদ, বিষটোপ দিয়ে আমরা আপ্যায়ন করি অতিথিদের। আমরা অতিথি পাখি বললেও তারা মূলত আসে জীবন বাঁচাতে। অপর দিকে আমরা তাদের বাঁচতে না দিয়ে শিকারে মত্ত হই। প্রাণ বাঁচাতে এসে কিছু অসাধু ব্যক্তির হাতে প্রাণ হারাচ্ছে।

সামান্য মুনাফার লোভে কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে পাখি নিধনে মত্ত হয়ে ওঠে। বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। কোনোভাবে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়না। ২শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত এসব পাখি বিক্রি হয়ে যায়।এক ধরনের অসাধু ব্যক্তি মুনাফার আশায় আইনকে উপেক্ষা করে এসব কাজ করে চলেছে। দু:খজনক হলেও সত্য এসব আইন থাকলেও কার্যকর খুব কম দেখা যায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসীম। পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধনই করে না, ভারসাম্যও রক্ষা করে। পোকামাকড় খেয়ে এরা কৃষকের উপকার করে। তাই অতিথি পাখি শিকার রোধে প্রচলিত আইন জোরদার করা জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশানকেও তৎপর থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার ওসি মোঃ বোরহানউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, থানা পুলিশ পাখি শিকার বন্ধে সবসময় তৎপর রয়েছে এবং পাখি শিকার করলে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাখি শিকার বন্ধে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সচেতন এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান থানা পুলিশের এ কর্মকর্তা।

আজকের বাংলাদেশhttps://www.ajkerbangladesh.com.bd/
আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল নিউজ পেপার এখন দেশ-বিদেশের সর্বশেষ খবর নিয়ে প্রতিদিন অনলাইনে । ব্রেকিং নিউজ, জাতীয়, আন্তর্জাতিক রিপোর্টিং, রাজনীতি, বিনোদন, খেলাধুলা আরও অন্যান্য সংবাদ বিভাগ । আমাদের হাত বাধা নেই, আমাদের চোখ খোলা আমরা বলতে পারি ।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments