বাংলাদেশ প্রতিবেদক: প্রায় এক দশক ধরে ভিক্ষুকের মতো পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এসআই মনীষ মিশ্র। পরিবার-পরিজন থেকেও যেন নেই। কেউ করুণা করলে খাবার জুটে, না হলে সারাদিন না খেয়েই কাটে তার। ভারতের মধ্যপ্রদেশ পুলিশের দক্ষ শ্যুটার ছিলেন মনীষ মিশ্র। কিন্তু ১০ বছর ধরে ঠিকানা তার ফুটপাত। মাথাভর্তি চুল, গালভর্তি না-কামানো দাড়ি। পথের ধূলিমাখা জীবনের সঙ্গী এরাই।
জানা গেছে, মানসিক ভারসাম্য হারানোর পরই মনীষের জীবনে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায়। একসময় পুলিশের চাকরিটা চলে যায় তার। আর ‘পাগল’ ছেলে কোথায় কী করে বসে, তাই পরিবারও দূরে ঠেলে দেয়।
এভাবেই চলে যাচ্ছিল তার ভরঘুরে জীবন। পুরনো ব্যাচমেটদের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় তার। মনীষকে দেখে তারা চিনতে পারেননি। কিন্তু মনীষ তাদেরকে চিনতে ভুল করেনি। এরপর যা ঘটে, তা কম নাটকীয় নয়।
মধ্যপ্রদেশ উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর রাস্তায় বেরিয়েছিল বিজয় মিছিল। সেই মিছিল ঘিরে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে তা দেখার দায়িত্বে ছিলেন ডিএসপি রত্নেশ তোমর ও বিজয় ভাদোরিয়া।
ফুটপাতে হঠাৎই তাদের নজর যায় এক ভিক্ষুকের দিকে। কী মনে করে পরনের ভালো জ্যাকেটটি পুলিশ অফিসার বিজয় তার হাতে তুলে দেন। রত্নেশ সিং তুলে দেন একজোড়া নতুন জুতা।
ফিরে আসছিলেন তারা। কিন্তু ওই ভিক্ষুক ভাদোরিয়ার নাম ধরে ডাকায় বিস্মিত হন অফিসার। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবারও এগিয়ে যান ওই ভিক্ষুকের দিকে। জিজ্ঞাস করে জানতে পারেন তিনি মনীষ মিশ্র। এরপর আর তাকে চিনে নিতে অসুবিধা হয়নি দুই পুলিশ অফিসারের।
১৯৯৯ সালের ব্যাচমেট তারা! মনীষকে তারা সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু মনীষের তীব্র আপত্তিততে শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এক আশ্রমে। সেখানেই তার মানসিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা গেছে, মনীষের বাবা ও চাচা দুজনই অ্যাডিশনাল এসপি পদে থেকে অবসর নিয়েছেন। মনীষের ভাই থানার অফিসার ইনচার্জ। তার বোন কাজ করেন দূতাবাসে। ডাটিয়া জেলায় শেষ পোস্টিং ছিল সাব-ইনস্পেক্টর মনীষের। তারপরই মানসিক অসুস্থতা।
এই ১০ বছর ভোপালের একাধিক আশ্রম ও ভবঘুরে কেন্দ্রে তাকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই তিনি পালিয়ে যান। তার পরিবারেরও দাবি, মনীষকে তারা ঘরে ধরে রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।