বাংলাদেশ প্রতিবেদকঃ চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন সবাইকে সাহস জোগাচ্ছে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, যেটা আমি আগেই বলেছি, আমরা একা নই। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা বিশ্ব কমিটেড টু ডেমোক্র্যাসি। এটার ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘তাদের যে কমিটমেন্ট আছে গণতন্ত্রের প্রতি সেই কমিটমেন্ট কিন্তু আমরা সামাল দিতে পারছি, সেই কমিটমেন্ট আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। একইসাথে এটাও মনে রাখতে হবে আমরা যারা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি এটাকে সামনে আরো দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ এসময় দেশের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তোমরা যে যা বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। মানে আমরা যে যা বলছি, উনি ওনার মতোই ভাবছেন। প্রধানমন্ত্রী জবরদখল করে ক্ষমতায় বসে আছেন।’ গতকাল রোববার দুপুরে গুলশানে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয়-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা ও এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় শীর্ষক সেমিনার এবং ‘নো কমেন্টস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এবার ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘যারা এভাবে কথা বলে, যেভাবেই হোক নির্বাচন হবে। নির্বাচন তো আমরাও চাই এবং সেটা জনগণের অধিকারের জন্য। কিন্তু সেই নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে যেখানে জনগণ তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।’
শেখ হাসিনা চাইলেই যে, বিনা ভোটারের মাধ্যমেই তিনি নির্বাচিত হবেন সেটা এবার হবে না। ২০১৪ সালে যা করতে পেরেছেন, ২০১৮-তে যেটা করতে পেরেছেন এবার সেটা আপনি করতে পারবেন না। কারণ এবার মানুষ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে করে সেটা সম্ভব হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেখানো পথ, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের দেখানো পথ, যেটা তিনি বারবার বলছেন যে, ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথেই ফয়সালা করার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি, চূড়ান্ত বিজয় অবশ্যই আমরা অর্জন করতে সক্ষম হবো, যেখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তি সম্ভব হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসল কথা হচ্ছে, উনি (শেখ হাসিনা) কালকে বলে দিয়েছেন তোমরা যে যা বলো ভাই আমার সোনার হরিণ চাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাই বলুক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাই বলুক, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলি, উনার ওই সোনার হরিণ চাই। অর্থাৎ ক্ষমতায় কাউকে যেতে দেবো না। টোটাল সঙ্কটটা ওই জায়গায়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কিছু কিছু লোক আছেন যারা সবসময় হতাশায় ভোগেন। আমার একটা বিশ্বাস যে, মাঠে থাকলে এই হতাশা আসে না। আমি তো আমার দলের কোনো মানুষের মধ্যে, কর্মীদের মধ্যে, নেতাদের মধ্যে হতাশা দেখি না। আমাদের সাথে যারা আছেন যুগপৎ আন্দোলন করছেন তাদের মধ্যে কোনো হতাশা দেখি না। আমরা বিশ্বাস করি এই সংগ্রামে অবশ্যই আমরা জয়লাভ করব। কারণ আমরা সত্যের পথে আছি, সঠিক পথে আছি।’
সেমিনারে ফখরুল আরো বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ কাউকে তোয়াক্কা করছে না। তারা আবারো পাতানো নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। কিন্তু আমরা সবাই এবার রাজপথে নেমে গেছি। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। যারা মাঠে আছে, তাদের মধ্যে হতাশা থাকে না। যুগপৎ আন্দোলন যারা করছি, তাদের মধ্যেও কোনো হতাশা নেই। আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিচ্ছে। তবুও হতাশা নেই। বিজয় আমাদের হবেই। আমাদের নেত্রী, এই অবস্থায়ও আপস করেননি। নেতাকর্মীরাও আপস করবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা আগের মতোই নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এবার আর পারবেন না। বাকি সব রাজনৈতিক দল নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় রাজপথে নেমেছি। লড়াই চালিয়ে যাবো। এ লড়াইয়ে আমরাই বিজয়ী হবো। আমরাও নির্বাচন চাই তবে যেনতেন নয়। ২০১৪, ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।’
রাজপথে ফয়সালার হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আবারো সরকার পতনের ডাক দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।