স্বপন কুমার কুন্ডু: মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে ঈশ্বরদীর চাষীদের জুড়ি নেই। এরসাথে বাড়তি প্রেরণা যুগিয়েছে বাজারে বছর জুড়েই পেঁয়াজের দামের উর্দ্ধমূখীতা। সব মিলিয়ে উপজেলার মাঠ জুঁড়ে চলছে পেঁয়াজ চাষের মহোৎসব। অতি বর্ষণ ও বৈরী আবহাওয়ার কারনে আগাম পেঁয়াজ চাষে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নাবিতে বা দেরীতে হলেও অনেকেই পেঁয়াজ রোপন করছেন। মৌসুমি পেঁয়াজ চাষীদের সফলতার জন্য অধিকাংশ কৃষকই উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
সরেজমিনে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা, কৈকুন্ডাসহ প্রমত্তা পদ্মার বিস্তির্ণ চর, ভাড়ইমারী, সিলিমপুর, নওদাপাড়া এলাকা ঘুরে পেঁয়াজ চাষীদের মহাকর্মযজ্ঞ দেখা যায়। পেঁয়াজ চাষীরা বলছেন, পেঁয়াজ রোপন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত সময় লাগে ৬০-৭০ দিন। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ মণ হারে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।
কৃষক আনারুল বলেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবারে পেঁয়াজ চাষে খরচ বেশী হয়েছে। কেননা ৫-৬ হাজার টাকা মণের পেঁয়াজের বীজ কিনতে হয়েছে ৮-৯ হাজার টাকায়। তাছাড়া সকল প্রকার সারের প্রতি বস্তায় ৩০০-৩৫০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। কীটনাশকেও একই অবস্থা ।
কৈকুন্ডার পেঁয়াজ চাষী হাসান ফকির বলেন, এবারে ৪০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। পেঁয়াজ চাষসহ কয়েক রকমের ফসলও আছে। কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট থেকে সুপরামর্শ পেলে ফলন ভালো পাওয়া যেত। তবে আবাদকৃত পেঁয়াজের মন তিন হাজার টাকার নিচে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে ।
কৃষক রওশন আলী বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে এবারে ফসল নষ্ট হয়েছে বেশী। পেঁয়াজে ফুফরি নামক রোগ আক্রমণ করছে। কৃষি অফিসের সহযোগীতা না পেয়ে স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতাদের উপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে। তাদের কথামতই আমরা ফসলে বালাইনাশকসহ সার প্রয়োগ করছি। এতে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।
পেঁয়াজ চাষী রাকিব হায়দার বলেন, মোট দশ বিঘায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছি। রোগবালাইয়ের কারণে দুঃশ্চিন্তায় আছি। সবকিছুর দাম উর্দ্ধমূখী থাকার কারনে খরচও এবার বেশী। সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের জন্য কোন প্রকার ভূর্তুকির ব্যবস্থা নেই। নেই সময়োপযোগী পরামর্শদাতা ও সহযোগীতা।
পেঁয়াজের মাঠে কর্মরত দিনমজুর হাফিজ মিঞা বলেন, পেঁয়াজের মৌসুমে আমাদের কদর একটু বেশীই থাকে। কারণ পেঁয়াজ নরম জাতীয় ফসল। তাই একে অতি আদরের সাথে বাড়তি সময় নিয়ে আগাছা পরিষ্কারসহ যাবতীয় কাজ মাঠে করতে হয়। নইলে গাছগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এসময় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরী পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের ব্যাপক আবাদ হচ্ছে। এবারে ৯২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করছে কৃষকরা। গ্রীষ্ম ও শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দিয়ে সহযোগীতা করছি। এবারে পেঁয়াজের ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি কৃষকরা লাভবান হবেন।