বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Homeসারাবাংলারংপুর জেলার বদরগঞ্জে দেশের সর্ববৃহৎ হাই-টেক ডেইরি ফর্মের যাত্রা শুরু

রংপুর জেলার বদরগঞ্জে দেশের সর্ববৃহৎ হাই-টেক ডেইরি ফর্মের যাত্রা শুরু

জয়নাল আবেদীন: রংপুর জেলার বদরগঞ্জে দেশের সর্ববৃহৎ হাই-টেক ডেইরি ফার্ম যাত্রা শুরু করেছে। দীর্ঘ ৫ বছর এই ফার্মের বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা বিশ্বের উন্নত দেশ সমুহ যেমন আমেরিকা তুরস্ক সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমুহ যেমন সৌদী আরব ইরান মিশর ভারত পাকিস্তান শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশের খামার পরিদর্শন এর মাধ্যমে লব্ধ অভিঞ্জতা সঞ্চয় করেছে । এছাড়া আমেরিকা অষ্ট্রেলিয়া নেদারল্যান্ড সুইডেন ও জার্মানী থেকে আগত ডেইরি বিশেষঞ্জদের পরামর্শ গ্রহনের মাধ্যমে ইয়ন গ্রæপ দেশের দুগ্ধ উৎপদনে অবদান রাখতে উন্নত বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় করে হাই টেক ইন্ডাসটিয়াল ডেইরী ফার্ম স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ।শীত প্রধান দেশ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে আকাশ পথে নিয়ে আসা ২শ২৫টি অষ্ট্রেলিয়ান গাভী মাত্র কদিনেই দেশীয় আবহাওয়ায় মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশ ও আবহাওয়া যেন বিন্দুমাত্র স্পর্শ করছে না তাদের, এমনকি অনুভব করছে তারা যে, কোত্থেকে কোথায় এখন অবস্থান তাদের। পরিচর্যা নিয়মমাফিক প্রাণি খাদ্য খাওয়া । এই সব বিদেশী গাভীগুলো আর তাদের ভালমন্দ দেখভালের বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন নেদারল্যান্ড থেকে আসা অভিজ্ঞ ডেইরি খামার বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক বাইজে। রংপুরের অতিথি হয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা গর্ভবতী ২শ২৫টি অস্ট্রেলিয়ান গাভীর বর্তমান চিত্র। এককালের চির মঙ্গা পীড়িত রংপুর । যদিও এখন আর সেই চিত্র চোখে পড়েনা। সেই রংপুরের বদরগঞ্জের নিভৃত পল্লীর এক গ্রামে বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তির হাইটেক ডেইরি ফার্ম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের অন্যতম এগ্রোবেজড্ প্রতিষ্ঠান ইয়ন বায়ো সায়েন্স লি.।আয়োজকদের জানিয়েছেন আগামীতে এই খামার এশিয়ার সর্ববৃহৎ গবাদি খামার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই তারা কাজ শুরু করেছেন । এখানকার প্রতিটি গরু বর্তমানে গর্ভবতী এবং আগামী তিনমাস পর বাছুর প্রসব করলে প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন অšতত ১০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করা যাবে । শুধু তাই নয় আগামী ৫ বছর পর প্রতিদিন যার পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ লিটারে। প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিন উদ দৌলা জানান, এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, এটি দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ, বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় মাত্র ২৫ ভাগ দুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। প্রতিবছর উৎপাদিত ঘাটতির কারণে দেশের কষ্টার্জিত মুদ্রা বৈদেশিক কাজে ব্যয় করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বিপুল পরিমাণ দুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তিনি বলেন এদেশে অধিক দুধ উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় উন্নত ও অধিক উৎপাদনশীল জাতের গবাদি প্রাণির অভাব। বাংলাদেশের আবহাওয়া জনিত কারণে বছরে প্রায় ৬ মাস উন্নত জাতের পিওর ব্রীড গবাদি পশু যেমন হলস্টিন ফ্রিজিয়ান গাভী পালন করা একটি বড় অন্তরায়।আর এই সীমাবদ্ধতা উত্তরণে ইয়ন বায়ো সায়েন্স দীর্ঘ ৫ বছর এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা, পর্যালোচনা করা হয়।, ডেইরি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমেই ইয়ন গ্রুপ দেশে দুধ উৎপাদনে অবদান রাখতে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় করে এই হাইটেক ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডেইরি ফার্ম স্থাপনের সিদ্ধা›ত নেয়। কর্তৃপক্ষ জানান, এই খামারে শুধু দুধ নয়, এর মাধ্যমে মাংস, চামড়া, জৈব সার এবং বিদ্যুত উৎপাদনে দেশে আমিষের চাহিদা আংশিকভাবে মেটানোর পাশাপাশি জাতীয় আয় স্থানীয়দের কর্মসংস্থান ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।সম্প্রতি সরজমিনে দেখা যায়, গরুগুলো রাখার জন্য সুইডেনের ডি লেভেলের নকশা অনুযায়ি উন্নত প্রযুক্তির বিশাল শেডের নিচে পৃথক পূথক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দুগ্ধ দোহনের জন্য সয়ংক্রিয় মিল্কিং পারলার স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ৫শ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই খামারে শুধু গরুই না, স্থাপন করা হয়েছে গোচারণ ভূমি। তাদের যাতে বাইরের খাবার খাওয়াতে না হয়, সে জন্য ‘আলফা আলফা হে’ নামীয় কানাডা এবং সুইডেন থেকে আমদানি করা হয়েছে এক বিশেষ ধরণের ঘাষ এবং ভুট্রার। এছাড়া ২শ৫০ একর জমিতে সেগুলো আবাদের প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। সাধারণত স্থানীয় জাতের গরুর বর্জ্য

অপসারণের যে গতানুগতিক সিস্টেম রয়েছে, এখানে তা নেই। বর্জ্য অপসারণের জন্য স্ক্রাপার মেশিন আমদানি করে তা দিয়ে সাথে সাথেই সেই বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানান, মশা মাছি এবং আশপাশের গরু থেকে যাতে রোগ জীবানু না ছড়ায় এবং আমদানিকৃত এই গরুগুলো যাতে কোন ধরণের রোগে আক্রান্ত না হয় সেজন্য প্রায় দু‘ মাস আগে আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় দুই হাজার গরুকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিয়েছেন তারা।কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবেদককে আরো বলেছেন ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের আশপাশের গ্রামগুলোর প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র খামারিদেরকে স্বল্প মূল্যে বাছুর সরবরাহ করবে । পাশাপাশি সার্বিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য, বিভিন্ন পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে এবং পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে উৎপাদিত দুধ সংগ্রহ করার মাধ্যমে বাজারজাত করা হবে। এতে করে ওই সব পরিবার আর্থিকভাবে লাভবান হবে।গত ১২ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে একটি কার্গো বিমানযোগে ২শ২৫টি অস্ট্রেলিয়ান গরু প্রথমে ঢাকায় এবং পরবর্তীতে ট্রাকযোগে রংপুরের নিভৃত পল্লীর এই খামারে নিয়ে আসা হয়। কর্তৃপক্ষের আশা করছেন স্থানীয় এই খামার থেকে উৎপাদিত দুধ দিয়ে প্রচলিত সব ধরণের দুগ্ধ পণ্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মতভাবে উৎপাদন ও বাজারজাত করা হবে এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানীর ব্যবস্থা নেয়া হবে।গরুগুলোর দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত নেদারল্যান্ডসের ডেইরি বিশেষজ্ঞ এবং ফার্মের পরিচালক ফ্রাঙ্ক বাইজো জানান, অস্ট্রেলিয়া শীত প্রধান দেশ। সেখানকার আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে আমরা শীত মৌসুমে গাভীগুলো এনেছি। গ্রীষ্মকালে এদের শেডে কৃত্রিম কুয়াশা ও তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যবস্থা নেয়া আছে। যাতে গরমে গাভীগুলো অসুস্থ না হয়।তিনি আরো জানান, তার সার্বিক তদারকিতে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার এই অতিথিরা এখানকার আবহাওয়া এবং পরিবেশে একাত্ম হয়ে গেছে ।

আজকের বাংলাদেশhttps://www.ajkerbangladesh.com.bd/
আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল নিউজ পেপার এখন দেশ-বিদেশের সর্বশেষ খবর নিয়ে প্রতিদিন অনলাইনে । ব্রেকিং নিউজ, জাতীয়, আন্তর্জাতিক রিপোর্টিং, রাজনীতি, বিনোদন, খেলাধুলা আরও অন্যান্য সংবাদ বিভাগ । আমাদের হাত বাধা নেই, আমাদের চোখ খোলা আমরা বলতে পারি ।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments